বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগে দুই আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

নেত্রকোনার খালিয়াজুরিতে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেটে দেওয়া অংশে পানির চাপে প্রায় ৩০ ফুট এলাকাজুড়ে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় কৃষকসহ শ্রমিকদের নিয়ে বাঁধ মেরামতে চেষ্টা চালায়।

এ ঘটনায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক লোকমান হেকিম এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল কবীরের নাম উল্লেখ করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হক মামলা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, সাবেক ওই জনপ্রতিনিধি নিজের জলমহালে পানি নিতে বাঁধ কেটে পাইপ বসিয়েছিলেন। কিন্তু পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধের ওই স্থানটি ভেঙে গিয়ে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। গত সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর এলাকার নন্দের পেটনা বাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত, খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হারুন অর রশিদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, খালিয়াজুরি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজিবুর রহমানসহ কর্মকর্তাদের তদারকিতে স্থানীয় লোকজনসহ কৃষকেরা বাঁধ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। শ্রমিকদের দিয়ে ভাঙা স্থানে বাঁশ, কাঠ, জিও ব্যাগ, খড়, চাটাই, মাটি, বালু ফেলে মেরামত কাজ চলছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ ছিল।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক লোকমান হেকিম এবং মেন্দিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল কবির দীর্ঘদিন ধরে একটি মৎস্য সমিতির নামে নন্দের পেটনা জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। গত সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে লোকমান ও রেজাউল লোকজন নিয়ে জলমহালে পানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাশের ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে পাইপ বসান। কিন্তু বাঁধে পানির প্রচুর চাপ থাকায় সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে নন্দের পেটনা হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান হাকিম ও রেজাউলকে ধাওয়া করেন। এ সময় লোকমান তার মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা মোটরসাইকেলটি পানিতে ফেলে দেয়।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল জাগো নিউজকে বলেন, টানা ২৫ দিন ধরে আমরা রাতদিন বাঁধে অবস্থান করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ কীর্তনখোলাকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। জেলায় কোনো হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি হয়নি। কিন্তু মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নন্দের পেটনার বাঁধ কেটে দেওয়ায় এখন হাওরে পানি ঢুকছে। তবে ভাঙন ঠেকাতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করা যাচ্ছে ভাঙন ঠেকাতে আমরা সক্ষম হবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে লোকমান হেকিমের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।

খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জাগো নিউজকে বলেন, লোকমান হেকিম তার লোকজন নিয়ে বাঁধ কেটে দিয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ জানিয়েছেন। দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যে বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে, সেটা খুবই শক্ত বাঁধ ছিল।

খালিয়াজুরি কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, খালিয়াজুরিতে প্রায় ৯২ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেলেও বাঁধটি রক্ষা করতে না পারলে পেটনার হাওর, বোয়ালির হাওর, মেন্দিপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি হাওর, মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশী, উচিতপুরসহ অনেক হাওরে প্রভাব পড়বে। এতে প্রায় ১৫০ হেক্টরের বেশি জমির বোরো ধান তলিয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সবাইকে নিয়ে বাঁধ রক্ষায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। লোকমান হেকিমের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে পুলিশ খুঁজছে। কৃষকের ফসলহানি ঘটলে এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এইচ এম কামাল/এমএইচআর



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/SXgzNVq
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url