নওগাঁয় বার্গার-পিৎজা খেয়ে শিশুসহ ৬০ জন হাসপাতালে

নওগাঁয় শহরের আরামবাগ কনফেকশনারি নামের একটি বেকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বার্গার ও পিৎজা খেয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীসহ ৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

সোমবার (৩ মে) রাত থেকে বুধবার (৪ মে) রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় হাসপাতালে ভর্তি হয় তারা। এখনো অনেকে ভর্তি আছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, আরামবাগ কনফেকশনারী পঁচাবাসী খাবারের কারণে পেট ব্যথা ও বমির সঙ্গে পাতলা পায়খানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষক্রিয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ঈদের আগের দিন সোমবার আরামবাগ কনফেকশনারির তৈরি লাচ্ছা, সেমাই, বার্গার, পিৎজাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খান ক্রেতারা। নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকরা জানান, নওগাঁ শহরের বাটার মোড়ে অবস্থিত আরামবাগ কনফেকশনারি বেকারি থেকে পিৎজা ও বার্গার কিনে খাওয়ার পরপরই তাদের পেটে ব্যথা ও বমির সঙ্গে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে স্বজনরা তাদের নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।সোমবার ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার পর থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি জেলার বদলগাছী সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাচ্চুর মেয়ে সাম্মা ফাতেমা বলেন, আরামবাগ কনফেকশনারি থেকে ছয়টি বার্গার কিনেছি। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় ছেলে, মেয়ে, বোন ও ফুফাতো ভাই এবং কাজের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বার্গার খাই। খাওয়ার পরপরই পেটের ব্যথা শুরু হয়। এরপর থেকেই পাতলা পায়খানা। প্রাথমিক অবস্থায় সবাই খাওয়ার স্যালাইন খায়। সমস্যা বাড়তে থাকায় ঈদের দিন দুুপুরে আমিসহ ছয়জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। ছোট বাচ্চা থাকায় পরে আমি বাড়িতে চলে আসি। বাকি সবাইকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন সুস্থ হতে প্রায় ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। আরামবাগ কনফেকশনারির বার্গার খেয়েই সবাই অসুস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় আরামবাগ কনফেকশনারি থেকে দু'টি বার্গার ও দু'টি পিৎজা কিনে ছেলে শাফায়াত ও শাদাতকে খাওয়ান। এর কিছু পরই বমি ও পেট ব্যথা শুরু হলে রাতেই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করি। আমি দোকান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে আরামবাগ কনফেকশনারির মালিক কাজী খালেক বলেন, যারা অসুস্থ হয়েছেন তারা বলছেন ঈদের আগের দিন (সোমবার) আমার দোকান থেকে কেউ দুপুর ও ইফতারের আগে বার্গার কিনেছিলেন। তারা বাসায় নিয়ে খেয়েছেন। পরদিন (ঈদের দিন) এক রোগী আমাকে ফোনে অভিযোগ করেন দোকানের বার্গার খেয়ে তার পরিবারের পাঁচ সদস্য অসুস্থ হয়েছেন। পরে দোকানে গিয়ে দেখি আরও কয়েকজন এসে একই বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। পরে শুনলাম হাসপাতালে অনেকেই পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, ওইদিন প্রায় ২০০ অধিক বার্গার বিক্রি হয়েছিল। বিক্রি তো অনেক হয়েছে। তবে সব মানুষ যে অসুস্থ হয়েছে তা নয়। কিছু মানুষ অসুস্থ হয়েছে। যেহেতু ঈদের আগে মানে রোজার সময় অনেকেই বার্গারসহ অন্য খাবারও খেয়েছেন। আমার দোকানের বার্গার খেয়ে যে অসুস্থ হয়েছে এটা বলা যাবে না। অন্য খাবারেও অসুস্থ হতে পারেন। আমরা মানসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে দিনে ৩ থেকে ৪ বার খাবার তৈরি করে বিক্রি করে থাকি। দিন শেষে কোনো খাবারই থাকে না। পরদিন নতুন করে খাবার তৈরি করে বিক্রি করা হয়।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, খাবারে বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে মোট ৫৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। বিষক্রিয়ায় পাতলা পায়খানায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই শিশু। বর্তমানে ২৪ জন ভর্তি আছে। শুধু আরামবাগ কনফেকশনারির খাবার খেয়েই যে অসুস্থ হয়েছে এমনটা নয়। অনেকের বাসার খাবারেও অসুস্থ হয়েছে। তবে আরামবাগ কনফেকশনারির খাবার খেয়েই বেশি অসুস্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, খাবার নিম্নমানের মেয়াদোর্ত্তীণ হতে পারে। নষ্ট খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো রোগীকেই অন্যত্র রেফার্ড করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, বিষয়টি জানার পর একজন ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রোগী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আরামবাগ কনফেকশনারির খাবার খেয়েই অসুস্থ হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আব্বাস আলী/এমএএইচ/



https://ift.tt/1cZxXzg
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/xgrQbE9
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url