রুয়েটে বাড়ছে গবেষণা, মিলছে সফলতা

এনায়েত করিম, রাজশাহী

বিরাজমান সমস্যা নিরসনকল্পে নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন ঘটাতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। আর গবেষণার সূতিকাগার হিসেবে ধরা হয় দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সম্প্রতি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণাকর্মে আগ্রহী করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে রুয়েটে ক্রমেই বাড়ছে গবেষণা কার্যক্রম। এতে মিলছে অভাবনীয় সফলতাও।

jagonews24

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনী নানা কর্ম সম্পাদন করে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে গবেষণার জন্য রুয়েটে অত্যাধুনিক বেশকিছু ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ল্যাব, হাইভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, রাডার অ্যান্ড স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, হাই কম্পিউটিং ল্যাব, আইওটি ল্যাব, ন্যানো টেকনোলজি ল্যাব, রোবোটিক্স ল্যাব ইত্যাদি।

jagonews24

গবেষণার মাধ্যমে দেশের প্রতিদিনের কারিগরি সমস্যা সমাধান সম্ভব। ফলে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালনে সার্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে রুয়েট প্রশাসন। এতে প্রকৌশল, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প আহ্বান, মঞ্জুরি ও পরিচালনা; দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ; মেধার স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফেলোশিপ, পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন ও বিতরণ; গবেষণা উন্নয়নের জন্য কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন ও পরিচালনা; নিয়মিত গবেষণা পুস্তক ও জার্নাল প্রকাশ করা হয়। প্রতি বছর গবেষণা প্রকাশনার জন্য ভ্রমণভাতা, প্রকাশনা ব্যয় ও প্রকাশনা সম্মানীসহ গবেষণায় আগ্রহী করতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে প্রশাসন।

jagonews24

আবার কিউএস বিশ্ব র‌্যাংঙ্কিংয়ের জন্যও কমিটি গঠন করেছে রুয়েট। ওই কমিটি রুয়েটের প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সংগ্রহ ও একত্রিকরণের মাধ্যমে ডেটাবেজ প্রস্তুতকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গবেষণা ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাপান, কানাডা, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এমওইউ চুক্তিও সাক্ষর করেছে রুয়েট।

গবেষণাকর্মে প্রশাসনের নানামুখী এই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার ইতিবাচক ফলও পাচ্ছে রুয়েট। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রুয়েটে গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০টি। চার বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯টিতে। ফলে গবেষণা খাতের বাজেটও বেড়েছে বহুগুণ। একইসঙ্গে রুয়েটে গবেষণার অগ্রগতি হিসেবে গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬০০ এর অধিক গবেষণাপত্র দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

jagonews24

শুধু গবেষণা করেই ক্ষান্ত হননি রুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বরং একবিংশ শতাব্দির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ও বাস্তবায়ন ঘটিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে তাক লাগিয়েছেন তারা। মহামারি করোনা-ভাইরাসের ভয়াল ছোবলে যখন সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে উৎকণ্ঠায় সময় পার করে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব, ঠিক তখনই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যে রুয়েটে দুটি ভেন্টিলেটর তৈরি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে একটি ভেন্টিলেটর দেশের একশত প্রজেক্টের মধ্যে প্রতিযোগিতায় ৫ম পুরস্কার অর্জন করে। আরেকটি ভেন্টিলেটর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে।

jagonews24

এদিকে, প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা অত্যাধুনিক হুইল চেয়ারও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যবহারকারী মুখ দিয়ে কথা বললেই চলাচল করবে এই হুইল চেয়ার।

এছাড়া অর্ধেক ঠান্ডা ও অর্ধেক গরম থাকবে এমন ফ্রিজ তৈরিও রুয়েটের গবেষকদের একটি অভাবনীয় সাফল্য। অন্যদিকে, বিদেশের মতোই তবে দেশীয় প্রযুক্তি ও উপাদান দিয়ে তেল সাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করেছে রুয়েট। এই লো ফুয়েল গাড়ি জাপানে প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেওয়ার গৌরব অর্জন করে। আবার অনেকে সফটওয়ার, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ তৈরিসহ প্রোগ্রামিংয়ের নানা ক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন।

jagonews24

এভাবে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবমুখী জ্ঞানও অর্জন করায় গুগল, মাইক্রোসফট, বোয়িংসহ দেশ-বিদেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরিতে যোগ দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন রুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অনেকে আবার তথ্য-প্রযুক্তি, গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সারাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন।

এসব বিষয়ে রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক র‌্যাংঙ্কিংয়ে কয়েকশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান না পাওয়ায় দেশে শিক্ষার মান ও উচ্চশিক্ষার সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখের নির্দেশনায় এসব সংকট দূর করে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে স্থান পেতে জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে রুয়েট।

jagonews24

তিনি বলেন, উপাচার্যসহ গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে কাউন্সিলিং, প্রকাশনার জন্য ভ্রমণভাতা, প্রকাশনা ব্যয় ও প্রকাশনা সম্মানী দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা হয়। ইউজিসির নীতিমালাকে সামনে রেখে রুয়েটও পৃথক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে গবেষণাকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। এতে বিগত তিন বছরে গবেষণাকর্ম কয়েকগুণ বেড়েছে। রুয়েটে এই ধারা অব্যাহত থাকলে গবেষণা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, অজানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভের অন্যতম সেরা মাধ্যম হচ্ছে গবেষণা। তাই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ও বাস্তবায়নে গবেষণার বিকল্প নেই। আর গবেষণার ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

তাই আমি রুয়েটের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করার চেষ্টা করেছি। এতে সফলতাও পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেশ ও দেশের বাইরে রুয়েটের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পাশে থাকছে রুয়েট।

এমআরএম



https://ift.tt/4tJFhrp
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/pnSyUuv
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url