রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ ওভারে পাকিস্তানকে হারালো ভারত

টানটান উত্তেজনা। পুরো স্টেডিয়ামে পিনপতন নীরবতা। কি হতে কী হয়! কোন দল জিতবে, শেষ ওভার পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিল না। যদিও ভারতের পাল্লাই ভারি ছিল শেষ দিকে এসে।

তবে লড়াইটা শেষ ওভারের চতুর্থ বল পর্যন্ত উম্মুক্তই ছিল দুই দলের জন্য। শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে হাসলো ভারত। হার্দিক পান্ডিয়ার ছক্কায় ভাঙলো পাকিস্তানের স্বপ্ন।

দুবাইয়ে এশিয়া কাপের বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৫ উইকেট আর ২ বল হাতে রেখে হারিয়েছে ভারত।

শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২১ রান। হারিস রউফের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারটিই যেন ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। ওই ওভারে রউফকে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান হার্দিক। ফলে শেষ ওভারে ভারতের দরকার পড়ে মাত্র ৭ রান।

jagonews24

মোহাম্মদ নেওয়াজ শেষ ওভার করতে এসে প্রথম বলেই রবীন্দ্র জাদেজাকে (২৯ বলে ৩৫) বোল্ড করে দিলে আবারও নড়েচড়ে বসেন পাকিস্তানি সমর্থকরা। নেওয়াজ পরের দুই বলে দেন মাত্র ১ রান।

শেষ ৩ বলে ভারতের দরকার তখন ৬। উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। সেই উত্তেজনার আগুনে জলই ঢেলে দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ওভারের চতুর্থ বলটি লংঅনের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেন এই অলরাউন্ডার। ১৭ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ম্যাচ জেতানো এক ইনিংস খেলে হার্দিক অপরাজিত থাকেন ৩৩ রানে।

অথচ ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। অভিষিক্ত নাসিম শাহর করা দ্বিতীয় বলে বোল্ড হন লোকেশ রাহুল। কাট করতে গিয়ে বল উইকেটে টেনে আনেন রাহুল (১ বলে ০)।

এরপর বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা বেশ কয়েকবার পরাস্ত হয়েছেন। তবে ভাগ্যগুণে আউট হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন দুজনই। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ভারত তোলে ১ উইকেটে ৩৮ রান।

সপ্তম ওভারে শাদাব খান দেন মাত্র ৩ রান। রানের চাপ কমাতে পরের ওভারে মোহাম্মদ নেওয়াজের ওপর চড়াও হন রোহিত। লংঅনের ওপর দিয়ে হাঁকান বিশাল এক ছক্কা। তবে এক বল পর আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই বিপদ ডেকে এনেছেন ভারতীয় দলপতি।

jagonews24

মিডঅফে তুলে মারতে গিয়ে ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে না পেরে লংঅনে ক্যাচ হন রোহিত। তাতেই থামে তার ১৮ বলে ১২ রানের ধীরগতির ইনিংসটি। এক ওভার পর আরেক সেট ব্যাটার কোহলিকেও ফেরান নেওয়াজ। ৩৪ বলে ৩৫ করে লংঅফে ধরা পড়েন কোহলি।

১১ থেকে ১৪-চার ওভারে মাত্র ২৭ রান তুলতে পারে ভারত। সেই চাপ থেকে সূর্যকুমার ১৫তম ওভারে চড়াও হতে চান নাসিম শাহর ওপর। কিন্তু ওভারের দ্বিতীয় বলটি ক্রস খেলতে গিয়ে পুরোপুরি মিস করে বসেন ডানহাতি এই ব্যাটার, বোল্ড হয়ে ফেরেন ১৮ বলে ১৮ করে।

৮৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে রবীন্দ্র জাদেজা আর হার্দিক পান্ডিয়ার ২৯ বলে ৫২ রানের জুটি। এই জুটিতে ম্যাচ ভারতের দিকে চলে আসে। পাকিস্তানের নাসিম শাহ ২৭ রানে ২টি আর মোহাম্মদ নেওয়াজ ৩৩ রানে নেন ৩টি উইকেট।

এর আগে ভুবনেশ্বর-হার্দিকদের তোপে ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ১৪৭ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে পাকিস্তানকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল ভারত।

jagonews24

অধিনায়ক রোহিত শর্মা অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর কুমারের হাতে তুলে দেন প্রথম ওভার। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রথম ওভারেই পাকিস্তানকে চেপে ধরেন এই পেসার। ওভারের দ্বিতীয় বলেই আবেদন। ভুবনেশ্বরের বাউন্সারটি গিয়ে আঘাত করে রিজওয়ানের ভেতরের পায়ে। আবেদনে সাড়াও দেন বাংলাদেশের আম্পায়ার মাসুদুর রহমান।

আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলে সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন রিজওয়ান। রিভিউতে দেখা যায়, বল চলে যেতো স্টাম্পের অন্তত তিন থেকে চার ইঞ্চি ওপর দিয়ে। সুতরাং, নট আউট। রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।

ওভারের শেষ বলে আবারও ব্যাটার রিজওয়ান। অফ স্টাম্পের বাইরে বলটি খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিকের হাতে। ফের আউটের আবেদন তোলে ভারতীয়রা। আম্পায়ার মাসুদুর থাকেন নির্বিকার। এবার ভারত নেয় রিভিউ।

এবারও বেঁচে যায় পাকিস্তান। রিভিউতে দেখা যায়, বল ব্যাটকে ছুঁয়ে যায়নি, একেবারে কাছ ঘেঁষে চলে যায়। ফলে দুই দুইবার আউটের খুব কাছে এসেও আউট হননি রিজওয়ান।

এক ওভার পর এসে ভুবনেশ্বরই ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ভুবনেশ্বরের বাউন্সার পুল করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন বাবর। ৯ বলে তিনি করেন মাত্র ১০ রান।

jagonews24

এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিটি যখন থিতু হওয়ার পথে, তখনই ফাখরকেও হারিয়ে বসেছে পাকিস্তান। ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে আভেশ খানের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে আউট হন ফাখর (৬ বলে ১০)।

অবশ্য বলটি গ্লাভসে নিলেও ব্যাটে লেগেছে কিনা নিশ্চিত ছিলেন না উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক। আবেদন করেননি ভারতীয় ফিল্ডাররাও। ফাখরই নিজে বেরিয়ে যান ক্রিজ থেকে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৩ রান তোলে পাকিস্তান।

এরপর ৩৮ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন ইফতিখার আহমেদ আর রিজওয়ান। ১৩তম ওভারে জুটিটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার বাউন্সার হুক করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কার্তিকের গ্লাভসবন্দী হন ইফতিখার (২২ বলে ২৮)।

নিজের পরের ওভারে এসে জোড়া শিকার করেন হার্দিক। সেট ব্যাটার রিজওয়ান (৪২ বলে ৪৩) আর খুশদিল শাহকে (২) ফিরিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন ভারতীয় অলরাউন্ডার।

সেখান থেকে দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ভুবনেশ্বরের লেগকাটারে আসিফ আলি (৭ বলে ৯) জোরে হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ হন বাউন্ডারিতে। পরের ওভারে মোহাম্মদ নেওয়াজকে (১) তুলে নেন অর্শদীপ সিং।

১১৪ রানে ৭ উইকেট হারানো পাকিস্তান এরপর লড়াকু পুঁজি পর্যন্ত গেছে শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে। হারিস রউফ আর শাহনেওয়াজ দাহানি ৮ বলে যোগ করে দেন মূল্যবান ১৯ রান। রউফ ৭ বলে ১৩ আর দাহানি ৬ বলেই ২ ছক্কায় করেন ১৬ রান।

১৯তম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করা ভুবনেশ্বরই ছিলেন ভারতের পক্ষে সবচেয়ে সফল। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৩টি উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া।

এমএমআর/এএএইচ



https://ift.tt/F91fB2x
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/wMLSdg5
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url