মেয়াদ শেষেও ইউজিসির ৩ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য

# ৯ প্রকল্পের অগ্রগতি ২০ শতাংশের নিচে, ইউজিসির অধীনেই ৭টি

# প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে ব্যানবেইস, অগ্রগতি ৪৫.০১ শতাংশ

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও শুরু হচ্ছে না তার কার্যক্রম। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এডিপি সভায় এসব চিত্র উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে নির্ধারিত সময়ে যথাযথ প্রকল্প বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দপ্তরের দক্ষতার অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। চলতি বছর জুন পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে এমন মন্তব্য করেন।

মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় ২০২১-২০১২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ৭৮টি প্রকল্পের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৬টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হচ্ছে ১০টি প্রকল্প, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) ১৭টি, বাংলাদেশ স্কাউটসের ৩টি এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) অধীনে ২টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। শূন্যের কোটায় থাকা তিনটি প্রকল্পই ইউজিসির অধীনে বাস্তবায়নাধীন।

এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন, জার্মান বাংলাদেশ হায়ার এডুকেশন নেটওয়ার্ক ফর সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ও ইন্ট্রিগ্রেটেড ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়সীমা ১ জানুয়ারি ২০১৫ সাল থেকে ৩০ জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। জার্মান বাংলাদেশ হায়ার এডুকেশন নেটওয়ার্ক ফর সাসটেইনেবল টেক্সটাইলের বাস্তবায়নকাল ছিল ১ জুলাই ২০১৭ সাল থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত। প্রকল্প দুটির মেয়াদ চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ইন্ট্রিগ্রেটেড ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট গত বছর ১ মে থেকে চলতি বছর ৩০ এপ্রিল বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্র ছিল।

উপরের তিনটি প্রকল্পসহ বাস্তবায়নের তলানিতে থাকা ৯ প্রকল্পের মধ্যে ৭টি প্রকল্প ইউজিসির অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে, বাকি ২টি প্রকল্প শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর (ইইডি) ও ব্যানবেইসের অধীনে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ইউজিসির অধীনে ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ১ জানুয়ারি ২০১৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৩ সাল।

১০ কোটি টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পের আর্থিক ব্যয় হয়েছে ২৫.৯ লাখ টাকা, যা বাস্তবায়নের মাত্র ২.৫ শতাংশ। ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ প্রকল্প ১ সেপ্টেম্বর ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়ে বাস্তবায়ন লক্ষমাত্রা ৩০ জুন ২০২৫ সাল। ইউজিসির বাস্তবায়নাধীন ৩৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দের এই প্রকল্পের অগ্রগতি ৫.১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩.৪২ লাখ টাকা। ইইডির অধীনে ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতিই ২০ শতাংশের নিচে। যেসব প্রকল্প মূল অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হয়েছে কিন্তু ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ২০ শতাংশের নিচে- এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন অপরিহার্য কিনা, কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতটুক বা সক্ষমতা আছে কিনা এবং কিছু বাদ দিতে হবে কিনা এসব বিষয় পর্যালোচনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন প্রকল্প অপরিহার্য না হলে এর পরিবর্তে চলমান প্রকল্পগুলো সমাপ্তকরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে চলমান প্রকল্পসমূহের মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। ১৭টি প্রকল্পকে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে, এসব প্রকল্পের জন্য পরবর্তী অর্থবছরে শতভাগ অর্থ ছাড় দেওয়া যাবে। ৫৪টি প্রকল্প ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে, অর্থ ছাড় করা যাবে ৭৫ শতাংশ এবং ১টি প্রকল্পকে ‘সি’ ক্যাটাগরি করা হয়েছে, এ প্রকল্পের জন্য কোনো অর্থ ছাড় করা যাবে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ৭৮টি প্রকল্পের জন্য ৮২৫৯.৭৩ কোটি (জি.ও.বি. ৭৭৯৩.৭৭ কোটি ও প্রকল্প সহায়তা ৪৬৫.৯৬ কোটি) টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মধ্যে আর্থিক অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে ৭০.৫৯ শতাংশ বা ৫৮ কোটি ৩০.৪০ লাখ (জি.ও.বি ৭১.৪৬ শতাংশ বা ৫৫ কোটি ৬৯.৭৬ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য ৫৫.৯৪ শতাংশ বা ২ কোটি ৬০.৬৪ লাখ) টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আওতাধীন প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। ৪৬ প্রকল্পের বিপরীতে ৩৫ কোটি ২৯.২৭ লাখ (জি.ও.বি ৩২ কোটি ৬৫.০৮ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য ২ কোটি ৬৪.১৯ লাখ) টাকা বরাদ্দ থাকলেও আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২২ কোটি ২৩.৫১ লাখ (জি.ও.বি. ৬৫ শতাংশ বা ২১ কোটি ৯.৫৪ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য ৪৩ শতাংশ বা ১ কোটি ১৩.৯৭ লাখ) টাকা।

অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৭৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৯টি প্রকল্পের অর্জন ২০ শতাংশের নিচে, ২৬টি প্রকল্পের অর্জন ৫০ শতাংশের কম এবং ৩৮টি প্রকল্প গড় অর্জনের থেকে বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে।

জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের কথা বলতে পারব না। তবে করোনা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেক প্রকল্পের কাজ স্থগিত ছিল। পরে কয়েকটি প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্টরা মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানান। আর্থিক বরাদ্দ না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করায় আমরা তাতে সম্মত হয়েছি।

ব্যানবেইসের অধীনে বাস্তবায়নাধীন আইইআইএমএসের প্রকল্প পরিচালক মো. শামসুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এমএইচএম/এমআরএম



https://ift.tt/tz6Vd4i
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/LkWqnAx
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url