ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় ১২২ কোটি ডলার

লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) কর্মসূচির অধীনে ভারত এখন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। এখন পর্যন্ত নমনীয় লাইন অব ক্রেডিট ঋণচুক্তি সই হয়েছে তিনটি। এলওসির অধীনে মোট প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট অর্থছাড় হয়েছে ১২২ দশমিক ২ কোটি ডলার। ভারতীয় এই ঋণে মূলত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাত বিশেষত, রেল যোগাযোগ, সড়ক পরিবহন, নৌ পরিবহন, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ, আইসিটি, টেলিযোগাযোগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চল খাতে উন্নয়ন করা হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র এ তথ্য জানায়।

সূত্র জানায়, তিনটি এলওসির আওতায় মোট প্রকল্প ৪২টি। সম্পন্ন হয়েছে ১৪টি প্রকল্পের কাজ। ২৭টি প্রকল্প নির্মাণসংশ্লিষ্ট। ৮ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান, তিন প্রকল্পে পরামর্শক ও ৭ প্রকল্প ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে। এছাড়া ১০ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে রয়েছে।

ইআরডির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। আমরা যত প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়াতে পারবো ততই ঋণছাড় বাড়বে। আগের চেয়ে আমাদের প্রকল্পগুলোর ম্যাচিউরিটি বেড়েছে। এর ফলেই মূলত ঋণছাড় বেড়েছে।’

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই। থাকলে তো আমরা জানতাম। আর প্রকল্পের কাজ তো সঠিকভাবে চলমান। এলওসির আওতায় ঋণছাড় বেড়েছে পাশাপাশি কমেছে সুদহারও।’

ঋণছাড়ে শীর্ষে প্রথম এলওসি
ইআরডি জানায়, ২০১২-১৩ সালে পদ্মাসেতু প্রকল্পে অনুদান (বাজেট সাপোর্ট) হিসেবে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার দেয় ভারত। ফলে ২০১২ সালের আগস্টে ৮০ কোটি ডলারের প্রথম সংশোধিত ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীসময়ে কিছু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ায় আলাদাভাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে অতিরিক্ত ৬ দশমিক ২ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পাওয়া যায়। ফলে প্রথম এলওসির আওতায় ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ২ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৭ কোটি ডলারের ঋণছাড় হয়েছে।

১৫ প্রকল্পের মধ্যে ১২ প্রকল্প এরই মধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনটি প্রকল্পের কাজ চলমান। খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ২০১৮ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ সংশোধন করে ২০২৩ সালের জুন মাস লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলতি বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংশোধন করে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত। এছাড়া কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন রেলপথ পুনর্বাসনের কাজও এ বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা পিছিয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ২৩ দশমিক ২ কোটি ডলার ঋণছাড়
প্রাথমিকভাবে দ্বিতীয় ঋণচুক্তির আওতায় ১৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীসময়ে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের একটি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দুটি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ২০০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় এলওসির আওতায় নেওয়া হয় ১২টি প্রকল্প। এর মধ্যে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ক্রয় সংশ্লিষ্ট দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। চারটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান, দুটি প্রকল্পে পরামর্শক ও একটি প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে। তিনটি প্রকল্পের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে রয়েছে। দ্বিতীয় এলওসির আওতায় মোট ঋণছাড় হয়েছে ২৩ দশমিক ২ কোটি ডলার।

তৃতীয় এলওসির আওতায় ছাড় হয়েছে ২৬ দশমিক ৩ কোটি ডলার
ভারতের সাবেক অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় ধাপের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই হয়। এরমধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ২৬ দশমিক ৩ কোটি মার্কিন ডলার। তৃতীয় এলওসির ১৬টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হলেও পরবর্তীসময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়। তৃতীয় এলওসির অর্থ বাস্তবায়নের জন্য ১৫টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলমান। একটি প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ ও ছয়টি প্রকল্প ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে আছে। সাতটি প্রকল্প আছে ডিপিপি প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্য স্থানে নেওয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা, মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত সড়ক চারলেনে উন্নীত করা, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

ঋণের মেয়াদ ও শর্ত
পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছর রি-পেমেন্ট পিরিয়ড। চুক্তি অনুসারে ৭৫ শতাংশ পণ্য/সেবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে, বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য/সেবা ভারতের বাইরে থেকে কেনা যাবে। নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে (কেস টু কেস ভিত্তিতে) ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসাপেক্ষে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য কেনা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ পণ্য/সেবা শুধু বাংলাদেশ থেকেই কেনা যাবে।

প্রকল্পের টেন্ডার ডকুমেন্ট চূড়ান্তকরণের আগেই এ ছাড় গ্রহণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রেসট্রিকটেড পদ্ধতিতে শর্টলিস্ট থেকে ভারতীয় ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে প্রকল্পভিত্তিক ঋণচুক্তি সই করা হলেও ভারতীয় ঋণের ক্ষেত্রে একটি ফ্রেমওয়ার্ক ঋণচুক্তি সই করার পর ওই ঋণচুক্তির আওতাধীন সব প্রকল্প প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয়। ঋণচুক্তির শর্ত অনুসারে চুক্তির আওতাধীন কোনো একটি প্রকল্পের বিপরীতে প্রথম অর্থছাড়ের দিন থেকেই ঋণের মেয়াদ গণনা শুরু হয় যা ওই চুক্তির আওতাধীন সব প্রকল্পের জন্য প্রযোজ্য।

ভারতীয় নমনীয় ঋণে কমেছে সুদের হার
প্রথম ঋণচুক্তিতে সুদের হার ছিল ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরবর্তীসময়ে উভয়পক্ষের সম্মতিতে সুদের হার ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। কমে ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এমওএস/এএসএ



https://ift.tt/VlvcWPH
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/uLzrI9F
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url