নানা বিষয়ে অনমনীয় মনোভাব আইএমএফ’র, আশ্বস্ত করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সংস্কার, মাত্রারিক্ত খেলাপি ঋণ হ্রাস, রিজার্ভ গণনা পদ্ধতিসহ নানা ইস্যুতে অনমনীয় মনোভাব আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের। তবে সব শর্ত পূরণের আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত আইএমএফ’র ঢাকায় সফররত প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের ওপরই বাংলাদেশের ৪৫০ কোটি (সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার) ডলার ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি নির্ভর করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঋণ পেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাবে, অনেকটাই কেটে যাবে শঙ্কা। বর্তমান রিজার্ভের সঙ্গে এ ঋণ নতুন করে যোগ হবে। তবে এ ঋণ পেতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে নানা পরামর্শ আর শর্ত দেওয়া হয়েছে।

তবে সফররত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা খেলাপি ঋণ হ্রাস, রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, ঋণে সুদ হারের সীমা বাতিল, একক ফরেন একচেঞ্জ রেট এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি ইস্যুতে ছাড় দিচ্ছে না। অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে। আর তাদের ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রায় ৫ বিলিয়নের এ ঋণ মিলবে। এর প্রথম কিস্তি আসতে পারে আগামী ডিসেম্বরেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে বুধবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন আইএমএফ’র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মিশন প্রধান রাহুল আনান্দসহ প্রতিনিধি দলটি। বৈঠকে তারা সফরকালে উল্লেখিত শর্তসমূহ বাস্তবায়নে জোর তাগিদ দেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের পক্ষে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, গভর্নরের সঙ্গে আইএমএফ’র প্রতিনিধিদলের ২৭, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবারের বৈঠকও ফলপ্রসু ও সন্তোষজনক হয়েছে।

নানা সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। ২০২২ সালের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ৮.৯৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশ রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা।

বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের পরও এ তথ্যটিকে সঠিকভাবে নিচ্ছে না আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, খেলাপি ঋণের তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন হচ্ছে না। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়। আইএমএফ’র মানদণ্ডে না নেওয়া হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠবে। সংস্থাটি বলছে, খেলাপি ঋণের যে হার দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তারচেয়ে অনেক বেশি।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মতে, খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয়। বাংলাদেশে এ হার ৯ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকে ২০ শতাংশের বেশি। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে, উদ্বেগ জানিয়েছে আইএমএফ। সন্দেহজনক লেনদেন ও অর্থপাচার নিয়েও উদ্বেগের কথা জানায় সংস্থাটি।

আইএমএফ’র তোলা এসব প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, সাধারণত খেলাপি ঋণের হিসাব দুইভাবে করা হয়। এর একটি গ্রস এবং অপরটি নিট হিসাব। গ্রস হিসাবে খেলাপি ঋণ বেশি হলেও নিট হিসাবে কম, যা ৩-৪ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। এ কারণে করোনাকালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। দেশের বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি ব্যাংকে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় একটু অসুবিধা হচ্ছে। কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সরকারি ব্যাংকের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই।

ইএআর/ইএ



https://ift.tt/Kmzh175
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/VIm5Zxn
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url