জাপানি মা নাকানো এরিকোর আবেগঘন চিঠি

বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার জাপানি মা নাকানো এরিকো বলেছেন, এখানে জীবন দুর্বিষহ। আমি বাংলাদেশে এখন বন্দি জীবন-যাপন করছি। আমি আমার চাকরি হারিয়েছি, এখন আমার বৃদ্ধ মাকে হারাতে যাচ্ছি। মাকে দেখতে কেউ আমাকে সহযোগিতা করছে না। বাকিটা আপনাদের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিলাম।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠি তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার সময় মা নাকানো এরিকোকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। ওইদিন পুলিশ জানায়, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে আদালতের কাগজপত্র দেখে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। এরপর নাকানো এরিকো এ চিঠি লিখেন।

চিঠিতে তিনি বলেন, আমি নাকানো এরিকো। একজন অসহায় জাপানি মা। আজ এখানে আমি কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ইমরান শরীফ (শিশুদের বাংলাদেশি বাবা) ২৩ ডিসেম্বর রাতে আমার ছোট মেয়ে লাইলা লিনাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি তার হদিস জানি না। বারবার ই-মেইল করেও জবাব পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, জাপানে আমার মা ৭৬ বছর বয়সী ও তিনি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। এখন তিনি জাপানে চিকিৎসাধীন। তিনি অধীর আগ্রহে শেষবারের মতো আমাকে ও নাতনিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমার মায়ের অসুস্থতার কারণে আমার তৃতীয় মেয়ে সোনিয়া কার্যত একা ও সে আমার জন্য প্রতিনিয়ত কাঁদছে।

তিনি আরও বলেন, এখন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ও পারিবারিক আদালত ছুটিতে রয়েছে এবং পারিবারিক মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ১১ জানুয়ারি। তাই আমি মৌখিকভাবে ইমরান শরীফের সঙ্গে শেয়ার করেছি যে- আমি এই ছুটিতে অল্প সময়ের জন্য মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে জাপান যেতে চাই। আমি ১০ জানুয়ারির মধ্যেই ফিরে আসবো।

‘গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট পারিবারিক আদালতকে তিন মাসের মধ্যে মামলাটি শেষ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ইমরান বিলম্ব করছে ও প্রায় এক বছর হয়ে গেছে, এখনো বিচার চলছে। তাই আমার মা ও তৃতীয় মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করা আমার জন্য অত্যাসন্ন। এখানে আমার অবর্তমানে মেয়েদের দেখাশোনার জন্য আমার কেউ নেই। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে নিয়ে আমার মুমূর্ষু মাকে দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। এছাড়া ইমরান আমার ব্যক্তিগত জীবন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেশকিছু গুপ্তচর নিযুক্ত করেছে। এমনকি আমরা কাছাকাছি শপিং মলেও যেতে পারি না। বিষয়টি আমি থানা ও পারিবারিক আদালতকে জানালেও তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি।’

ইমরান আমার ড্রাইভার, অনুবাদক, বন্ধু ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও অভিযোগ করেছে। এমনকি সে আমার বাসার রিয়েল এস্টেট ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছে। ইমরান মেয়েকে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময় ও স্থানের বাইরে নিয়ে ক্রমাগত আদালতের আদেশ অমান্য করেছে। এমনকি বেশ কয়েকবার আমাকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করেছে। ভিসা কর্তৃপক্ষ আমাকে সহযোগিতা করেনি। তারা মূলত আমার ভিসা প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে ও অপ্রয়োজনে বিভিন্ন প্রমাণপত্র দেখতে চায়।

এদিকে তাদের বড় কন্যা জেসমিন মালিকা চিঠিতে বলেছে, আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই। জাপানে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে শিশুটি।

 

এফএইচ/আরএডি



https://ift.tt/kANVCKX
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/T9j0ZWA
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url