‘তারা শুধু আমার স্বামীকে মারেনি, আমাদেরও মেরে ফেলেছে’

‘আমার স্বামী তার মেয়েদের অনেক আদর করতেন। বাসায় যতক্ষণ থাকতেন মেয়েদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। মেয়েরাও তাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। আমাদের একা করে তিনি চলে গেলেন। আমাদের সংসারে স্বামী ছাড়া উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই। তারা শুধু আমার স্বামীকে মেরে ফেলেনি, সঙ্গে আমাদেরও মেরে ফেলেছে। আমাদের অসহায় করে দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’

এভাবেই আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন আসমা জামান। তার স্বামী মো. জামান কাজল নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি রেস্তোরাঁ’র ম্যানেজার ছিলেন। তাকে রেস্তোরাঁর মধ্যে গুলি করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি

jagonews24

নিহত জামান কাজল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে। তিনি বন্দরের নবীগঞ্জ কুশিয়ারা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

কাজলের পরিবারে স্ত্রীসহ দুই মেয়ে রয়েছে। এক মেয়ে ইকরা (১০) পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। আর নুসরাত জাহান শ্রাবণ (১৮) একাদশ শ্রেণির ফলপ্রার্থী। এই মেয়েরা তাদের বাবাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে।

৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাষাঢ়ায় আঙ্গুরা প্লাজায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি রেস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হন এক নারীসহ পাঁচজন। তাদের মধ্যে মারা যান কাজল। এ ঘটনায় আঙ্গুরা প্লাজার মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজাহার তালুকদার ও আরিফ তালুকদার মোহনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দুজনে বাবা-ছেলে।

jagonews24

এদিকে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিহত কাজলের স্ত্রী তার দুই মেয়েকে নিয়ে কান্না করছেন। কান্না করতে করতে যেন তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে গেছে। নির্বাক হয়ে বসে রয়েছেন তারা। আর তাদের ভিড় করে রেখেছেন প্রতিবেশীরা।

আরও পড়ুন: মরদেহ নিয়ে রাস্তায় সহকর্মীদের বিক্ষোভ

এসময় কাজলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী ভালো মানুষ ছিলেন। সংসারের প্রতি তার মনোযোগ ছিল। বাসায় না থাকলে ফোন করে আমাদের খোঁজ নিতেন। মেয়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। মেয়েদের নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়াশোনা করিয়ে তাদের উচ্চশিক্ষিত বানাবেন। আজ তিনিই আমাদের মাঝে নেই। আমরা এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো।

এই কথা বলে কান্না করে দেন কাজলের স্ত্রী আসমা। তিনি বলেন, বুধবার বড় মেয়ের এইচএসসির রেজাল্ট দেবে। কথা ছিল রেজাল্ট পাওয়ার পর মেয়েদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবো। কিন্তু আমাদের আর ঘুরতে যাওয়া হলো না। তিনি আমাদের একা করে চলে গেলেন।

jagonews24

নিহত রেস্তোরাঁ ম্যানেজার মো. জামান কাজল

কাঁদতে কাঁদতে ছোট মেয়ে ইকরা বলে, আমাকে বাবা অনেক আদর করতো। কাজের চাপে যখন বাসায় থাকতো না তখন ফোন করে খবর নিতো। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।

বড় মেয়ে নুসরাত জাহান শ্রাবণ বলেন, আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। আমার রেজাল্ট শুনে বাবা অনেক খুশি হতেন। তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমার রেজাল্ট এখন কে শুনবে। কাকে শোনাবো আমার রেজাল্টের কথা। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই।

আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁ ম্যানেজার নিহতের ঘটনায় রিমান্ডে বাবা-ছেলে

মায়া নামে এক প্রতিবেশী নারী বলেন, কাজল ভাই অনেক ভালো ছিলেন। এলাকার কারও সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল না। কেউ বলতে পারবে না তিনি খারাপ ব্যবহার করেছেন। তিনি তো চলে গেলেন। এখন তার পরিবারের কী হবে। কোথায় যাবে তারা? এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে ঘটনার পর রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী বাদী হয়ে আজাহার তালুকদার ও আরিফ তালুকদার মোহনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। মঙ্গলবার আসামিদের দুদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

jagonews24

গ্রেফতার আজাহার তালুকদার ও আরিফ তালুকদারকে আদালতে নেওয়া হয়

রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পানির বিল বাবদ ১০ লাখ টাকা চেয়ে আমাদের গালমন্দ করতে থাকেন আজাহার। আমরা এর প্রতিবাদ করি এবং বলি, এ বিষয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু তিনি কথা না শুনে দৌড়ে পিস্তল ও শটগান এনে গুলি চালান। তার সেই গুলিতে আমাদের ম্যানেজার কাজলসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এতে কাজল মারা যান। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

এদিকে ঘটনার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, রাগের বশে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/জেডএইচ/



https://ift.tt/siBCa1K
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/y6u4LUW
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url