নোয়াখালীর পলাতক ৩ জনের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষ্য ২৪ মে

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার তিন আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দশম ও এগারো তম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৪ মে দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি জাগো নিউজকে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন- আবুল খায়ের, আব্দুল খালেক ও শেখ ফরিদ।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন গাজী এমএইচ তামিম।

প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন পলাতক। আর অন্য এক আসামি গ্রেফতারের পর মারা গেছেন। এখন মামলার আসামি তিনজন।

২০২০ সালের ১২ আগস্ট এ মামলায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট থানার চার আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. আবদুল হান্নান খান ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ৭৮তম তদন্ত প্রতিবেদন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর তদন্ত শুরু হয়ে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট শেষ হয়। এসময় এলাকার ৭০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ২৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের তথ্য-উপাত্ত (১১৪ পৃষ্ঠার) সংগ্রহসহ চারটি ভলিউমে ২২২ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. শাহজাহান কবীর। এসব আসামিদের বিরুদ্ধে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও গণহত্যার ঘটনায় মোট তিনটি অভিযোগ আনা হয়।

এর আগে চার রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যে ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো।

অভিযোগগুলো হলো

এক. ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় সালেহ আহম্মেদ মজুমদার, আমান উল্যাহ্ ফারুক, আব্দুর রব বাবু, আক্তারুজ্জামান লাতু, ইসমাঈল হোসেন, মোস্তফা কামাল ভুলু সহ ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন পাকিস্তান বাজারে (বর্তমানে বাংলা বাজার) অপারেশন শেষ করে বাঞ্ছারাম ১৫ নম্বর স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় এসে সহযোদ্ধাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এসময় বসুরহাট ও চাপরাশির হাট রাজাকার ক্যাম্প থেকে আসামিদের নেতৃত্বে ১০০/১২০ জন সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মি তাদের ওপর অতর্কিত হামলায় চালায়।

রাজাকারদের অতর্কিত হামলায় তারা গুরুতর আহত হয়ে স্লুইস গেট সংলগ্ন টংঘর ও ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়। রাজাকাররা টং ঘর ও ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে গুলি করলে সালেহ্ আহম্মেদ মজুমদার, মোস্তাফা কামাল ভুলু, আমান উল্যাহ্ ফারুক, ইসমাঈল হোসেন, আক্তারুজ্জামান লাতু, আব্দুর রব বাবু ও পথচারী গোলাম মাওলাসহ অজ্ঞাত আরও দুজন মৃত্যুবরণ করেন। সবার মরদেহ পাওয়া যায়।

দুই. ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ১০টায় আসামিরাসহ ২০/২৫ জন সশস্ত্র রাজাকার কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন চরফকিরা গ্রামের ইউসুফ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে চাপরাশির হাট রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওই দিনে দুপুর দুইটার দিকে একই আসামিরা চাপরাশির হাট দক্ষিণ বাজার থেকে হাবিবুর রহমানকেও অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আসামিরা তাদের ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে।

পরের দিন ভোর রাতে আসামিরা ইউসুফ মিয়া ও হাবিবুর রহমানকে ১৯ নম্বর স্লুইস গেটে নিয়ে গুলি করে। গুলির আঘাতে ইউসুফ মিয়া ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করলেও হাবিবুর রহমান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খালের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়ে তিনি দুদিন পর বাড়ি ফিরে আসেন। শহীদ ইউসুফ মিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়নি।

তিন. ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর দুপুর ২টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে ১৫/২০ সশস্ত্র রাজাকার চিকিৎসক রমেশচন্দ্র ভৌমিককে নোয়াখালী জেলার তৎকালীন সুধারাম (বর্তমানে কবিরহাট থানা) থানাধীন রামেশ্বরপুর গ্রামের নিজ বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে অপহরণ করে চাপরাশির হাট রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাজাকারেরা ডাক্তার রমেশচন্দ্র ভৌমিককে ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে। আসামিরা পরের দিন ভোর রাতে রমেশচন্দ্র ভৌমিককে কবিরহাট থানাধীন ১৯ নম্বর স্লুইস গেটে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ খালের পানিতে ফেলে রাখে। পরে শহীদ রমেশচন্দ্র ভৌমিকের মরদেহ পাওয়া যায়।

ওই চার আসামির মধ্যে একজন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালী জেলা ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন। অন্য তিন আসামি থানা ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনজন আসামি জামায়াতে ইসলামের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। অন্যজন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এফএইচ/ইএ



https://ift.tt/MHleocz
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/EPVfJd7
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url