চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ছাড়তে ১৬ জাহাজকে নির্দেশ

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এ ঘোষণার পর থেকে বন্দর অপারেশন বন্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এরইমধ্যে বন্দরের জেটিতে পণ্য ও কনটেইনার খালাসরত ১৬ জাহাজকে জেটি ছাড়তে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী জোয়ারের সময়ে এসব জাহাজ জেটি ছেড়ে যাবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, যদিও ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু চট্টগ্রামে এখনো কোনো বৃষ্টি কিংবা ঘূর্ণিঝড় নেই। তাই পেন্ডিং কাজগুলো করা হচ্ছে। যেসব কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কথা রয়েছে সেগুলোর কাজ হচ্ছে। নতুন করে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া হচ্ছে না। জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে জেটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামনের জোয়ারে জাহাজগুলো ছেড়ে যাবে। তাছাড়া বহির্নোঙরে থাকার জাহাজগুলোকে ইঞ্জিন চালু অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার (১২ মে) রাত ১টা ১৩ মিনিট থেকে কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চট্টগ্রামের আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেইসঙ্গে কিছু স্থানে অস্থায়ী দমকা ঝড়ো হওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। বর্তমানে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৪ সেলসিয়াস বেশি।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামে দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১৮-২৫ কিলোমিটার বেগে যা অস্থায়ী দমকায় ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রচারিত ১২নং বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (১২ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিয়ে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিতে তার পরিবর্তে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ইকবাল হোসেন/এমআরআর



https://ift.tt/ScwH42Y
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/z0oksFe
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url