ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো ও সুখস্মৃতি এ দুটি ইনিংস: মিরাজ

কী আশ্চর্য মিল! ২০১৫ সালেও ঘরের মাঠে প্রথম ২ ম্যাচ জিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। ৭ বছর আগে প্রথম দুই ম্যাচে বল হাতে আগুন ঝরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রথম ম্যাচে ৫০ রানে ৫ আর দ্বিতীয় খেলায় ৪৩ রানে ৬ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। আর এবার সেই ভারতের বিপক্ষে শেরে বাংলায় পর পর দুই খেলায় ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং করে দল জিতিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

৪ ডিসেম্বর রাতে মিরাজ খেলেছিলেন ৩৮ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। শেষ উইকেটে মোস্তাফিজকে নিয়ে ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে জয়ের নায়ক বনে গিয়েছিলেন মিরাজ।

আর আজকের ভূমিকাটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ধুঁকছিল। ৬৯ রানের মধ্যে অধিনায়ক লিটন দাস, এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর আফিফ হোসেন ধ্রুব আউট হয়ে গিয়েছিলেন।

সে রকম কঠিন বিপদে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন মিরাজ। রিয়াদকে নিয়ে ১৪৮ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েছেন। তাতে বিপর্যয় কাটিয়ে বাংলাদেশ পৌছে যায় ২৭০’র ঘরে। পরপর দুদিন এমন নায়কোচিত পারফরমেন্সে পাদ-প্রদীপের আলোয় উঠে আসা। কেমন লাগছে এমন হিরো বনে যাওয়ায়?

৬৯ রানে ৬ উইকেট পরে যাবার পর তার আর রিয়াদের চিন্তা ভাবনা আর লক্ষ্য কি ছিল? তারা কতদুর যাবেন বলে যাত্রা শুরু করেছিলেন? কত রান করতে পারলে ভারতের সাথে লড়াই করা যাবে? মনে করেছিলেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের আসলে ওইরকম কোন চিন্তা ছিল না। আমরা এমন ভেবে চিন্তে খেলিনি যে অত রান করতেই হবে। আসলে আমি আর রিয়াদ ভাই যখন জুটি গড়ি তখন রানের হিসেব কষে খেলার সুযোগ ও অবকাশ কিছুই ছিল না। কারণ ৬৯ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটেছিল।’

‘রিয়াদ ভাই আর আমিই শুধু ছিলাম বাকি। আমরা তাই রান করার চেয়ে উইকেটে থাকতেই চেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল আর উইকেট না দিয়ে যেন উইকেটে টিকে থাকতে পারি। এর মধ্যে একটু একটু করে ছোট ছোট পার্টনারশিপ গড়ার চিন্তায়ও ছিল। আলহামদুল্লিাহ আমার আর রিয়াদ ভইয়ের পার্টনারশিপ অনেক ভাল হয়েছে। ’

ব্যাটিংয়ের সময় তার আর রিয়াদের মধ্যে কি কি কথা-বার্তা হয়েছে? মিরাজের জবাব, আমার আর রিয়াদ ভাইয়ের মধ্যে আসল কথা হয়েছে বল টু বল খেলার জন্য। অবস্থা বুঝে খেলার জন্য। কখনো রিয়াদ ভাই বলেছেন। আবার কোন সময় আমিও বলেছি। তিনি সিনিয়র হলেও আমার কথা শুনেছেন। সেই ছেট ছোট কথোপকোথনগুলো অনেক কাজে দিয়েছে।’

রিয়াদ আর তার জুটি নিয়ে অনেক কথা বললেও নাসুম আহমেদকে ক্রেডিট দিতে ভোলেননি মিরাজ। নাসুম শেষ দিকে ১১ বলে ২ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ঝড়ের গতিতে ১৮ রান তুলে দিয়েছেন। মিরাজের অনুভব, সেটা অনেক কাজে দিয়েছে। নাসুম ভাইকে ক্রেডিট দিতে চাই। তার ছোট কনট্রিবিউশনটা আমাদের অনেক কাজে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: টানা দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার মিরাজের হাতে

শেষ বলে গিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। আজকের ম্যাচে কখনো কি মনে হচ্ছে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতরান করে ফেলবেন, শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার থাকা অবস্থায়ও কি শতরানের চিন্তা মাথায় আসেনি?

মিরাজের ছোট্ট অথচ সরল জবাব, ‘নাহ! সেঞ্চুরি করবো ভাবিনি।’

এ দুদিনের পারফরমেন্সের মূল্যায়ন করে কোনটাকে এগিয়ে রাখছেন মিরাজ? কোনটা বেশি কঠিন ছিল? হঠৎ ব্যাটিং ভাল হয়ে যাবার কারণই বা কি? সবকিছু নিয়েই আজ শেরে বাংলার কনফারেন্স হলে ম্যাচ শেষে অনেক খোলা মেলা কথাই বলেছেন মিরাজ।

তার প্রথম কথা, ‘পরপর দুদিন দল জেতানো ব্যাটিং করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। সৃষ্টিকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন ভাল খেলার। দলের সাফল্যে কার্যকর ভূমিকা রাখার। সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। ভারত অনেক বড় দল। এমন বড় দলের সাথে পারফর্ম করাটা অনেক তৃপ্তির।’

‘তবে এটা সত্য, এই দুইম্যাচে আমার ব্যাটিং পারফরমেন্স যেমন হয়েছে, আমার নৈপুণ্যে দল জিতবে, আমি নায়ক বনে যাব- এমন কোনো চিন্তা ও পরিকল্পনা ছিল না । তবে এটা ঠিক যে, আমি চেষ্টা করি দিনকে দিন কিভাবে উন্নতি করা যায় , সে চেষ্টা ছিল। ভালো করার আর উন্নতির শেষ নেই। নিজেকে ভাল করার জন্য তৈরি করেছি।’

আজকে আর কালকে কোনটা কঠিন ছিল? কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন? মিরাজের জবাব, ‘দুটিই কঠিন। কোনটাই কম না। তবে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। শেষ উইকেটে ৫১ কম না। আর আজ ৬৯ রানে ৬ উইকেট পতনের পরের কাজটাও কম কঠিন ছিল না। আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভাল ও সুখস্মৃতি এ দুটি ইনিংস।’

এআরবি/আইএইচএস/ইএ



https://ift.tt/mZ8ETqG
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/ikPfUtI
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url