কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ সরকারের

ডলারের বিপরীতে দেশে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে পণ্যের দাম। আমদানি ব্যয়সহ নানা খাতে খরচও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আবার বাড়তি খরচ মেটাতে চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব বাড়ছে না। এসব কারণে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে ঘাটতি মেটানোর অন্যতম খাত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেছে নিচ্ছে সরকার। ফলে ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই শেষ ভরসা সরকারের। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের দায় বা ঋণ বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। শুধু এক বছরের ব্যবধানেই সরকারের দায় বেড়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন: ডলার-রিজার্ভ সংকটের পর আলোচনায় ‘ঋণ কেলেঙ্কারি’

তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ১৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সেই ঋণ এক লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকাতে পৌঁছেছে। হিসাব মতে, এক বছরে ব্যবধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের অঙ্ক বেড়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি উভয়ই বাড়বে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলে বেসরকারি ঋণ কমবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার বেশি বেশি ঋণ নিলে সরকার সাময়িক সময়ের জন্য উপকৃত হবে। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।

সাধারণত ঘাটতি বাজেটের জন্য সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে জোর দেয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি মেটাতে মোট ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ঋণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই বিপুল অর্থের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সংগ্রহ করবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: চীনা ঋণের ফাঁদ: বাংলাদেশ নেই তো?

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটিতে পৌঁছেছে। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণ ছিল ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। হিসাবে বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঋণ বেড়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে সরকার তেমন কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল।

আরও পড়ুন: কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে সরকারের নিট ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৬৪ কোটিতে। এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমেছে ২৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।

আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিশোধ করেছে। গত ছয় মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সেখান থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।

ইএআর/জেডএইচ



https://ift.tt/tXpyrsu
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/Cjvp7Tc
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url