গণমাধ্যমে কথা বলে পদ হারালেন আ’লীগ নেতা
গণমাধ্যমে কথা বলায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীমের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা কার্যকরী পরিষদ।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবু সাঈদ দীন ইসলাম ফখরুল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখার কার্যকরী পরিষদের এক সভা ১৯ এপ্রিল ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীমকে গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারা মোতাবেক তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারায় বলা হয়েছে, সংগঠনের যে কোনো শাখা তাহার যে কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যকে দলের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য স্ব-স্ব পদ বা দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি দিতে পারিবে।
তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন শাখার প্রয়োজন হইবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শাখার সাধারণ সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে। ঊর্ধ্বতন শাখা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তাহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানাইবে, অন্যথায় গৃহীত সিদ্ধান্তের সহিত ঊর্ধ্বতন শাখা একমত বলিয়া গণ্য হইবে।
এ বিষয়ে বৈঠক ডাকার পর ১৮ এপ্রিল কথা হয় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি অসুস্থ, বৈঠকে যাব না। তবে উনি (কাজী আজাদ জাহান শামীম) আপনাদের জাগো নিউজে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে সাংগঠনিক বিধিবিধান অনুসারে ৪৭ আর ৪৯ ধারা অনুসারে তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়ার, সেটি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যে কথাগুলো মিডিয়ায় বলেছে, সেগুলো সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা মিডিয়ায় ফোকাস করার বিষয় না। এটাই মূলত তার অপরাধ।
বিষয়টি নিয়ে মতামত নিতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মুঠোফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
তবে এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম জাগো নিউজকে বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে কাজ করছি, আমৃত্যু করে যাব। এক সময় ছাত্রলীগ করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। বহু উত্থান পতন দেখেছি। দলের দুঃসময়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। মিডিয়ায় যে কথা বলেছি, দলের স্বার্থে আওয়ামী লীগের প্রতি দরদ থেকেই বলেছি। কাউকে কষ্ট দেওয়া বা দলের ক্ষতির জন্য বলিনি।
তিনি বলেন, আমি গণমাধ্যমে যে কথা বলেছি, সেটা যেভাবেই উপস্থাপন করা হোক- তার সারমর্ম হলো, সম্মেলনে তৃণমূলে কর্মীদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। এতে তারা উজ্জীবিত হয়। নেতৃত্ব বাছাইয়ে স্বচ্ছতা থাকে। সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসে। দল শক্তিশালী হয়। সম্মেলন ছাড়া কমিটি হলে তৃণমূল কর্মীরা বিমুখ হয়, নেতৃত্ব বাছাই সব সময় সঠিক হয় না। এতে ত্যাগী কর্মীরা বঞ্চিত হয়, দল দুর্বল হয়। দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি হয়।
‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছে বড় পরিবর্তন’ শিরোনামে ১১ এপ্রিল সংবাদ প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এতে দলটির আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকটি পদে পরিবর্তনের সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি সারাদেশে আওয়ামী লীগের ইউনিটগুলোর সম্মেলন, বর্ধিত সভা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেখানে তৃণমূলের সম্মেলনে কর্মীদের মতামত (ভোট) নেওয়া হচ্ছে না এমন চিত্র উঠে আসে। সে বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীমের বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বৈঠক ডাকে জেলা আওয়ামী লীগ। আজকের সেই বৈঠকে তাকে অব্যাহতির দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোরও নোটিশ দেয়।
এসইউজে/এমআরএম
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/q9RvbTd
via IFTTT