একজন শাহ মোয়াজ্জেম

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।

অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৪ সালে ঢাকার সেন্টগ্রেগরিজ হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন।

এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই এমএ ও এলএলবি পাস করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

বহু আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতা ১৯৫২ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গরুতর আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তার ঠিকানা ছিল মূলত কারাগার।

বন্ধু মহলে কারাগারের পাখি বলে পরিচিত শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ৮৩ বছরের জীবনে অন্তত ২০ বছর জেল খেটেছেন।

ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে এ দেশে অনেক প্রথিতযশা রাজনীতিক তৈরি করেছেন।

১৯৬৬ সালের ছয়দফা ও ১৯৬৯ সালের এগার দফার অন্যতম রূপকার শাহ মোয়াজ্জেম মহান মুক্তিযুদ্ধেরও অন্যতম সংগঠক। তিনি স্বাধীনতার সপক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে টানা আড়াই ঘণ্টা ভাষণ দেন। নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা সেসময়ের জাতীয় নেতাদের মধ্যে অন্যতম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রবীণ এই রাজনীতিক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো চিফ হুইপ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর দ্বিতীয়বারের মতো চিফ হুইপ নির্বাচিত হন তিনি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আশির দশকে শাহ মোয়াজেম হোসেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব, এরশাদ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ উপনেতা ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হন।

চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

‘নিত্য কারাগারে’, ‘বলেছি বলছি বলবো’, ‘ছাব্বিশ সেল’, ‘জেল হত্যা মামলা’সহ ডজনখানেক বই প্রকাশ হয়েছে তার।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ৩০ মিনিটে গুলশান নিজ বাসায় ৮৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খান তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

কেএইচ/ইএ



https://ift.tt/3j7fTiv
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/tDwxXA9
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url