তলানিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, বাড়ছে ব্যাংকঋণ

সাধারণ মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র। তবে এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উল্টোপথে হাঁটছে। সুদহার কমানোসহ নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে। এর বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। এতে উন্নয়নসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এ খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার। উল্টো সরকার আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করছে। এতে বাড়ছে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকের আগের বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। সরকার আরও তিন হাজার ১০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেছে।

আরও পড়ুন: প্রথম কিস্তির ৫০৯৪ কোটি টাকা পেলো বাংলাদেশ

সদ্য সমাপ্ত বছরের ডিসেম্বরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে পাঁচ হাজার ৫৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। একই সময়ে গ্রাহকদের আগের বিক্রয় করা সঞ্চয়পত্রের মূল বাবদ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ২৩৪ কোটি টাকা এবং সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার ডিসেম্বরে আসল ও সুদসহ মোটা সাত হাজার ৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তথ্য বলছে, শুধু ডিসেম্বরেই সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা সংগ্রহের পরিবর্তে উল্টো এক হাজার ৪৯১ কোটি টাকা সরকার কোষাগার কিংবা ধার করে পরিশোধ করেছে। এর আগের মাস নভেম্বরেও বিক্রিত সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ৯৭৮ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছিল সরকার।

অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির চেয়ে উল্টো ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৭০ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। এ নিয়ে টানা চার মাস সঞ্চয়পত্রে ঋণাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হলো।

আগস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র আট কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। গত বছরের (২০২১ সালের জুলাই) একই মাসে বিক্রির অঙ্ক ছিল দুই হাজার ১০৪ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে আইএমএফের ঋণ পাচ্ছি: অর্থমন্ত্রী

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা করেছে। বিপুল এ অঙ্ক নেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও এর বিপরীতে প্রথম ছয় মাসে এ খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। উল্টো তিন হাজার ১০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে সরকার।

চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। যেখানে প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগের বিক্রয় করা সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: সাত মাসে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ৯২০ কোটি ডলার বিক্রি

সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। পাশাপাশি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-এ হিসাব খুলতেও রিটার্ন বাধ্যতামূলক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবুও বাড়তে থাকে বিক্রি।

সর্বশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকার যেন বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ কমানো হয়। এরপর থেকেই বিক্রি কমছে।

ইএআর/আরএডি



https://ift.tt/Tm52NBn
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/aFPp6HG
via IFTTT
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url